Friday, March 18, 2016

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অজানা ইতিহাস


জন্ম
১৮৯৭ সালের ২৩ই জানুয়ারী এক বাঙালি পরিবারে বর্তমান ভারতের উড়িষ্যার কটক শহরে জন্ম। পৈতিক নিবাস পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার কোদালিয়া গ্রামে।তার পিতার নাম জানকীনাথ বসু পেশায় আইনজীবী এবং মাতা প্রভাবতী দেবী।তিনি চৌদ্দজন ভাই বোনের মধ্যে নবম।

শিক্ষাজীবন
শিক্ষা জীবন শুরু রভিন সাও কলেজিয়েট স্কুল দিয়ে । ষষ্ঠ শ্রেণি পর্ন্ত তিনি কটকের ইংরেজি স্কুল স্টিওর্য়াট এ পড়াশোনা করেন।১৯১১ সালে তিনি কটকের র‌্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানে তার ইংরেজি অধ্যাপক ওটেন ছিলেন ভারত-বিদ্বেষী। অধ্যাপক ওটেনের ভারতবিরোধী কথাবার্তার ঘোর বিরোধিতা করেন সুভাষচন্দ্র বসু।এই কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ কয়েকজন ছাত্রসহ সুভাষচন্দ্র কে কলেজ থেকে বহিষ্কার করেন। তারপর তিনি স্যার আশুতোষ চৌধুরীর সহায়তায় কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন এবং স্কটিস চার্চ কলেজ থেকেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।১৯২০ সালে ইংল্যান্ডে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিটজউইলিয়াম কলেজ থেকে মরাল সায়েন্স ক্যামব্রিজ ট্রাইপস এ চর্তুথ স্থান লাভ করেন।

বিপ্লবী চেতনা 
সুভাষচন্দ্র বিপ্লবী চেতনার কারণ ব্রিটিশ শাসনামল থেকে ভারতবাসীকে মুক্ত করা।

রাজনৈতিক প্রারম্ভিকতা
যখন ১৯১৯ সালে মহাত্না গান্ধী ‘রাউটাল বিল’ বাতিলের আবেদন জানান। একই বছর এপ্রিলে সর্বভারতীয় সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয় এবং হরতাল পালিত হয়। তখন দিল্লি যাওয়ার পথে গান্ধীকে গ্রেফতার করা হয়। গান্ধীজির এই আন্দোলন এবং জালিয়ানওয়ালাবাগে হত্যাকান্ডের ঘটনার পর সুভাষচন্দ্র বসু তীব্র বিট্রিশবিরোধী হয়ে ওঠেন। তখন তার একটাই উদ্দেশ্য ছিল যে করেই হোক বিট্রিশদের ভারত থেকে উৎখাত করা।


রাজনৈতিক প্রবাহ
ডিগ্রি নিয়ে ১৯২১ সালের ১৬ জুলাই ভারতে ফিরেই গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন নেতাজি। গান্ধীজির নির্দেশে দেখা করেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে। চিত্তরঞ্জন দাস সেই সময় সবার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন। এরপর চিত্তরঞ্জন কলকাতা পৌরসংস্থার মেয়র নির্বাচিত হলে তার অধীনে বেশ কিছুদিন কর্মরত ছিলেন নেতাজি। ১৯২৫ সালে অন্যান্য জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে তাকেও বন্দী করা হয়। ১৯২৭ সালে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা কংগ্রেসকে সামরিক নিয়মে সাজান। এক্ষেত্রে তিনি ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ বাহিনী গড়ে তোলেন এবং আরেকটি ‘হিন্দুস্থান সেবক দল’ বাহিনী গড়েন। ১৯২৯ সালে আগস্ট মাসে ‘নিখিল ভারত লাঞ্ছিত রাজনৈতিক দিবস’ উপলক্ষে তিনি একটি শোভাযাত্রার কারণে তাকে গ্রেতফার করা হয়।১৯৩০ সালে তাকে ইউরোপে নির্বাসিত করা হয়। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর ঢাকা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ডুর্নোকে হত্যার প্রতিবাদ করায় ১১ নভেম্বর ঢাকার তেজগাঁও রেল স্টেশন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৪ই নভেম্বর ৫০০ টাকা জরিমানায় জামিনে মুক্তি পান। ১৯৩২ সালে ১ জানুয়ারি কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ইংরেজদের সব ধরনের রাজনৈতিক অত্যাচার বন্ধ করার দাবি উঠে এবং এক সপ্তাহ সময় বেধে দেওয়া হয় এই আন্দোলন সূত্রে মহাত্না গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, বল্লভ ভাই পাটেলসহ নেতাজি সুভাষ বসুকে গ্রেফতার করা হয়।বন্দী থাকা অবস্থায় নেতাজির স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় তাকে্ ইউরোপ পাঠানো হয়। এরই মধ্যে তার উপর ভারতে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ১৯৩৬সালের ১১ই এপ্রিল এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভারতে ফিরলে তাকে আবার গ্রেফতার করা হয় এবং ১৭ মার্চ ১৯৩৭ সালে মুক্তি পায়।সুভাষচন্দ্র দুবার ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন কিন্তু মহাত্না গান্ধীর সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা করায় পদত্যাগ করতে হয়।১৯৪০ সালে নেতাজিকে আবার গ্রেফতার করা হয় এবং ১৯৪১ সালে জানুয়ারিতে গৃহবন্দী অবস্থায় পলায়ন করে আফগানিস্তান হয়ে রাশিয়া চলে যান। এরপর তিনি গোয়েন্দা ফাঁকি দিয়ে জাপান-অধিকৃত সিঙ্গাপুরে রাসবিহারি বসুর তত্ত্বাবধানে ভারতীয় উপমহাদেশের যুদ্ধবন্ধীদের নিয়ে ‘আজাদ-হিন্দু ফৌজ’ গঠন করেন এবং এর সর্বাধিনায়ক হন।এরপর রাসবিহারি বসু, প্রবাসে একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন যা ছিল ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী নামে। ১৯৪৩ সালে একটি সভার আয়োজন করা হয় এতে প্রেসিডেন্ট রাসবিহারি, সুভাষচন্দু কে পরিচয় করিয়ে দেন এবং প্রেসিডেন্ট পদে তার স্থলাভিষিক্ত করে তিনিই তাকে নেতাজি উপাধি দেন।১৯৪৪ সালে ১৮ই মার্চ ব্রিটিশ বাহিনীকে পরাজিত করে ‘আজাদ হিন্দু ফৌজ’ উম্ফল ও কোহিমার পথে অগ্রসর হয়। ২১মার্চ ‘আজাদ হিন্দু ফৌজ’ মনিপুরে প্রবেশ করে। যুদ্ধের শেষ দিকে জাপান আত্নসমর্পন করলে, সুভাষ বসু এই বাহিনী প্রত্যাহার করেন। এরপর তার আর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। একটি মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পরে নেতাজি টোকি্ও যাওয়ার পথে ফরমোসার তাইকুর বিমান দুর্ঘটনায় ১৯৪৫ সালে নিহত হন। আরেকটি মহল বলে, নেতাজি সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে বন্দী অবস্থায় সাইবেরিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন। আবার অনেকের মত, নেতাজি সুভাষচন্দু বসুকে জনপ্রিয়তায় কারণে ইংরেজ সরকার ও কিছু ভারতীয় ঈর্ষান্বিত মহল পৃথিবী থেকে তাকে সরিয়ে দেন।


শ্রেষ্ঠ উক্তি
রাজনৈতিক জীবনে সুভাষ চন্দ্র বসুর সবচেয়ে বিখ্যাত উক্তি হল,
"তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব"
(হিন্দিতে, তুম মুঝে খুন দো, ম্যায় তুমহে আজাদি দুঙা) যা ১৯৪৪ সালে ৪ জুলাই বার্মাতে বলেছিলেন।আর একটি উক্তি হল "ভারতের জয় ("জয় হিন্দ"), যা কিনা পরবর্তিতে ভারত সরকার গ্রহণ করে নেয়।

সংসারিক জীবন
১৯৩৪ সালে ভিয়েনাতে থাকাকালীন এমিলি শেক্ষল এর সঙ্গে পরিচয় হন এবং ১৯৩৭ সালে তার সঙ্গে ব্যাড গ্যাস্টিন এ বৈবাহিক জীবনে আবদ্ধ হন। তাদের কন্যা সন্তান জন্ম নেয় অনিতা বসু-পাফ।
সবাইকে ধন্যবাদ।

Thursday, January 21, 2016

স্টিভ জবস্ এর অনুপ্রেরণামূলক শ্রেষ্ঠ উক্তি

                          
                               
         স্টিভ জবস্ (জন্ম: ১৯৫৫- মৃত্যু: ২০১১)
সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও অব অ্যাপল কম্পিউটার
   
 পৃথিবীতে অনেকেই অনেক রকম উক্তি শুনেছেন কিন্তু অনেকেরই হয়তো অজানা যে এই প্রযুক্তি গুরু স্টিভ জবস্ জীবন ও প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছূ গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে গিয়েছেন।
দেখে নেওয়া যাক স্টিভ জবসের সেই কয়েকটি উক্তি-

১. “আমার কাছে কম্পিউটার হচ্ছে এমন একটি অসাধারণ টুল যা আমরাই তৈরি করেছি। এটা মনের বাইসেকেলের সমতূল্য বললেও ভুল হবে না।” (চলচ্চিত্র ‘মেমোরি অ্যান্ড ইমাজিনেশন’ ১৯৯০)

২. “আমি অনেক কিছুই না কিনে বসে থাকি, কারণ আমার কাছে সেগুলো হাস্যকর মনে হয়েছে।” (দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট)।

৩. “আমি মনে করি মৃত্যু হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে অসাধারণ উদ্ভাবন। এটি জীবন থেকে পুরোনোও সেকেলে জিনিস থেকে মুক্ত করে।” (প্লেবয় সাক্ষাৎকার, ১৯৮৫)

৪. “মানুষ মনে করে ফোকাস অর্থ হচ্ছে তাকে যে বিষয়টিতে মনোনিবেশ করতে বলা হয়েছে, সে বিষয়ে হ্যাঁ বলা। কিন্তু এর অর্থ উল্টো। এর অর্থ হচ্ছে অন্যান্য হাজারো ভাল আইডিয়াকে বিদায় জানানো। তবে এ কাজটি আপনাকে সতর্কভাবে করতে হবে। আমরা যে কাজগুলো করেছি, সেগুলোর জন্য আমি যতখানি গর্বিত, যে কাজগুলো করিনি সেগুলোর জন্যও আমি ঠিক ততোখানিই গর্বিত। উদ্ভাবন মানে হচ্ছে হাজারটা বিষয়কে না বলতে পারা।” (অ্যাপল ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ডেভেলপারস কনফারেন্স, ১৯৯৭)।

৫. “কবরস্থানের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হওয়া আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়..... রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় আমরা অসাধারণ কিছু করেছি বলতে পারাটা.... এটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” (ফরচুন, ১৯৯৩)

৬. “মানুষের সঙ্গে সহজ ব্যবহার করা আমার কাজ নয়। আমার কাজ হচ্ছে, মানুষকে দিয়ে আরও ভাল কিছু করানো।” (ফরচুন, ২০০৮)

৭. “আপনি যদি সৃজনশীল পথে আপনার জীবন কাটাতে চান, একজন শিল্পী হিসেবে, তাহলে আপনার পেছনের দিকে বেশি তাকানোটা ঠিক হবে না। আপনার মধ্যে ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে, যার মাধ্যমে আপনি যা ছিলেন এবং আপনি যা করেছেন তা যেন ছুড়ে ফেলে দিতে পারেন।” (প্লেবয়, ১৯৮৫)।

৮. “উদ্ভাবন নেতা এবং অনুসারীর মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে।” (দ্য ইনোভেশন সিক্রেটস অফ স্টিভ জবস, ২০০১)

৯. ব্যবসার জন্য আমার মডেল হচ্ছে বিটলস। তারা চারজন ছিলেন যারা একে অপরের নেতিবাচক দিকগুলো সামলে রাখতেন। তারা একে অপরের ভারসাম্য বজায় রাখতেন এবং একক হিসেবে নয় সম্পূর্ণ হিসেবে তারা ছিলেন অসাধারণ। আমিও ব্যবসাকে ঠিক ওইভাবে দেখি: ব্যবসাতে বড় বড় কাজগুলো কখনও একজন ব্যক্তি একা করেন না। ওই কাজগুলো দলবদ্ধভাবে করা হয়।” (“৬০ মিনিটস”, ২০০৩)

১০. “সক্রেটিসের সঙ্গে একটি সন্ধ্যা কাটানোর জন্য আমি আমার সব প্রযুক্তি দিয়ে দিতে রাজি।” (নিউজউইক, ২০০১)।

১১। ক্ষুধার্ত থেকো,  বোকা থেকো – (২০০৫ সালে “স্ট্যানফোর্ডবিশ্ববিদ্যালয়ে)

                                         সবাইকে ধন্যবাদ।